ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২নং বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি ও বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২নং বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের উপকারভোগীদের জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্ডের অনুমোদন রয়েছে ১২৯৭টি, এর মাঝে ১০২৫টি কার্ড দেওয়া হয়েছে জনগণকে। বাকি ২৭২টি কার্ডের যায়গাতেই ছোট টোকেন করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজ বলয়ের ও হিতাকাঙ্ক্ষীদের মাঝে বণ্টন করায় অনেক উপকারভোগী বঞ্চিত হয়েছে সরকারের এই সুলভমূল্যে পণ্য বিতরণী সুবিধা থেকে। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
গণমাধ্যমকর্মী সংবাদ সংগ্রহে ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হলে ডিলার বিল্লাল মিজি গণমাধ্যমকর্মীকে অর্থপ্রদানের মাধ্যমে ম্যানেজ করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে পড়েন। কার্ডবিহীন ছোট টোকেনে পণ্য ক্রয় করেছে অনেকে। যার ফলশ্রুতিতে টোকেনে পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে ছোটখাটো সংঘাতের ঘটনাও ঘটেছে এই দিনে। কোনরকম অফিসিয়াল তত্বাবধান ছাড়াই স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের মাধ্যমে এভাবেই অনিয়ম করার অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে।
টিসিবি পণ্য বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি (ট্যাগ) অফিসারের উপস্থিতিতে পণ্য বিক্রয়ের বিধান রয়েছে। কিন্তু টিসিবি পণ্য বিক্রি ও বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসার ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (ফরিদগঞ্জ পৌরসভা) মোহাম্মদ নূরে আলমকে উপস্থিত দেখা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কর্মী, আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের মধ্যে একাধিক টিসিবির কার্ড ও অনেকের মাঝে কার্ড ছাড়াই একাধিক টিসিবির পণ্য দেয়া হয়েছে। আবার একজন-ই একাধিক কার্ডে পণ্য ক্রয় করার অভিযোগও উঠেছে।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় চালের বস্তা খুলে একটি প্লাস্টিকের বালতি দ্বারা অনুমান করে গ্রাহকদের চাল দেয়া হচ্ছে। প্রতি গ্রাহকের মাঝে ৪৭০ টাকার বিনিময়ে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি মশুরির ডাল ও ২ লিটার ভোজ্য তেল দেয়ার কথা। কিন্তু পরিমাপ ছাড়া চাল দেয়ায় ৫ কেজির জায়গায় অনেকেই পাচ্ছেন ৪ কেজি ৭০০ গ্রাম/৮০০ গ্রাম। আবার একই ব্যক্তি ৩ থেকে ৪টি কার্ডের পণ্য তুলতে দেখা গিয়েছে।
স্থানীয় সানকি মিয়াজি বাড়ির জুয়েল, ওই গ্রামের বড় মিয়াজি বাড়ির মঞ্জুমা, ও অন্যান্য বাড়ির মিজান, রহমত আমিনুল, বিল্লাল, শ্বাওনসহ অনেককে কার্ডের বিকল্প টোকেনের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করতে দেখা গিয়েছে। এর মাঝে ছোট টোকেনে একাধিক পণ্য ক্রয় করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। এই দৃশ্য দেখে রীতিমতো হতবাক হয়েছে ইউনিয়নের সচেতন মহল।
এদিকে স্থানীয় ৪নং ওয়ার্ডের ৪৬ বছর বয়সী রহিমা নামক এক বৃদ্ধাকে একটি কার্ডের জন্য আর্তনাদ করতে দেখা গেছে। তিনি জানান, গত চার মাস যাবৎ ইউপি সদস্যের কাছে গিয়েও আশা ছাড়া কোন প্রতিকার মিলেনি তার। এছাড়াও ৪নং ওয়ার্ডের ফাহাড় বাড়ির ফরিদা বেগম ৫০ নামক অন্য এক মহিলাকে কার্ডের জন্য বিভিন্নজনের কাছে যেতে দেখা যায়। তিনি জানান, ওই ইউপি সদস্য এক সপ্তাহে কার্ড করে দেওয়ার কথা বললেও গত চার মাসে কিছুই মিলেনি তার প্রাপ্তির ঝুড়িতে।
বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের টিসিবি পণ্যের নির্ধারিত ঠিকাদার মালিক বিল্লাল মিজি বলেন, কার্ডের বাহিরে টোকেনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করতে আমরা অনিচ্ছুক, কিন্তু চেয়ারম্যানের নির্দেশ পালনে সে এক প্রকার বাধ্য হয়ে এ অনিয়ম করতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
টিসিবি পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের সময় অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (ফরিদগঞ্জ পৌরসভা) মোহাম্মদ নূরে আলম মোবাইল ফোনে বলেন, তাকে না জানিয়ে-ই টিসিবি কার্ডের পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। এবং ব্যাপারটি নিয়মবহির্ভূত উল্লেখ করে উর্ধতনের কাছে এর নালিশ করবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইউপি সচিব আমির হোসেন সোহেল জানান, তিনি গত দুই মাস হয় উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন। আসার পর থেকেই কার্ড বিতরণের এই অনিয়ম তিনি অবলোকন করছেন। তিনি আরও জানান, ইউনিয়নে টিসিবি কার্ডের অনুমোদন রয়েছে ১২৯৭টি, এর মাঝে ১০২৫টি কার্ড দেওয়া হয়েছে জনগণকে। বাকি ২৭২টি কার্ডের যায়গাতেই ছোট টোকেন করে চেয়ারম্যান নিজ পছন্দ মতো মানুষকে সুবিধা দিচ্ছে বলে মন্তব্য তার।
অভিযোগগুলোর ব্যাপারে জানতে চাইলে, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ পূর্ণ বিষয়টিকে অস্বীকার করে এগুলো ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌলী মণ্ডল বলেন, একই ব্যক্তি একাধিক কার্ডের পণ্য তুলতে পারবে না। কার্ডের বিকল্প টোকেন ব্যাবস্থা অনিয়ম। তিনিও আরও বলেন, ব্যাপারটি তদন্ত করা হবে। এর সত্যতা পাওয়া গেলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।