১৭ বছর প্রবাস জীবনে একবারও মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরা হয়নি ফরিদগঞ্জ উপজেলার আব্দুর রহিমের। একমাত্র ছেলে এখন দশম শ্রেণির ছাত্র। ভাগ্যের নির্মমতায় গেল দুই বছর ধরে কুয়ালালামপুরের অদূরে বাতু কেভস এলাকার একটি উড়াল সেতুর নিচে বসবাস তার। পুরাতন জিনিসপত্র ও ময়লার স্তুপ থেকে জিনিসপত্র সংগ্রহ করে কোনোরকম খেয়ে-পরে কাটছে তার জীবন।
সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক যখম হলেও চিকিৎসার টাকা না থাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আহত আব্দুর রহিম বলেন, রাস্তা পারাপারের সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি, পরে মাইক্রোবাসের চাকা যায় তার পায়ের ওপর দিয়ে। এ সময় জ্ঞান হারান তিনি। তিন-চার ঘণ্টা পর পুলিশ এসে উদ্ধার করে তাকে পার্শ্ববর্তী সেলায়েং হাসপাতালে পাঠায়। তবে কাছে পর্যাপ্ত টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পূর্বের স্থলেই পাঠিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ১৭ বছর একজন মানুষ পরিবার-পরিজন ছাড়া থাকছেন বিষয়টি খুবই কষ্টের। তিনি ব্রিজের নিচেই থাকতেন। দুর্ঘটনার পর দুই-তিন দিন রাস্তাতেই পড়ে ছিলেন, ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। পরে কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি মিলে তাকে সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। শ্রমিক লীগ সভাপতি নাজমুল ইসলাম বাবুলকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি হাইকমিশনের মাধ্যমে সেলায়েং হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
এ বিষয়ে কমিউনিটি নেতা ও জাতীয় শ্রমিক লীগের মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি নাজমুল ইসলাম বাবুল বলেন, শুধু টাকা নয়; আহত আব্দুর রহিমের চিকিৎসার বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার কাগজপত্র ও পাসপোর্ট। তবে, মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম বিভাগের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আব্দুর রহিমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আশা করি, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় অসহায় এ প্রবাসীকে আমরা ভালোভাবে তার পরিবারের কাছে ফেরত পাঠাতে পারবো।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান আব্দুর রহিম। কাজ করতেন পাম বাগানে। নানা কারণে পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই প্রবাসে থাকতে হচ্ছে তাকে। জীবনের এই সময়ে একমাত্র সন্তান ও স্ত্রীর কাছে ফিরতে চান এই প্রবাসী।