ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের অদূরে অবস্থিত গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোঃ কবির হোসেনকে ঘিরে তৈরী হয়েছে বহুমুখী নেতিবাচক কথার গুঞ্জন। নিয়মনীতি পরিপন্থী পরিচালনা’ই যেন তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। এমনটাই বলছেন সচেতন শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সভাপতি হুমায়ুন পাটওয়ারীকে ম্যানেজ করে সকল ধরনের অনিয়ম করে চলছেন বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকবৃন্দ।
ইদানিং গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচনকে ঘিরে অভিভাবক সদস্য প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন দুলালা খান নামক একজন অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও প্রতিবন্ধী সেবা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, গত ২০২৪ ইং সনে বিদ্যালয়টির নির্বাচন হওয়ার কথা এবং ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে। ভোটার তালিকায় ভোটার নং ৩৭ মোঃ ইলিয়াছ রাড়ী, তাঁর ছেলে আঃ রহমান, রোল নং ৩৭, শ্রেণি- ৬ষ্ঠ। আঃ রহমান বর্তমানে দারুল উলুম রশিদিয়া মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী। জন্ম সনদ দিয়ে ৫ম শ্রেণির সনদবিহীন ভর্তি করানো হয়। আঃ রহমান কখনও গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস করেনি বা কখনও বিদ্যালয়ে আসেনি। এবং আঃ রহমান কখনও কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েনি। মোঃ ইলিয়াছ রাঢ়ি বর্তমানে গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য। ভোটার নং ৯৫ মোহাম্মদ মাসুদ, তাঁর ছেলে মোঃ ইরফান শারাফ খান, রোল নং ৯৫, শ্রেণি-৬ষ্ঠ। জন্ম তারিখঃ ২০/০৭/২০১৫।
মোহাম্মদ মাসুদ উত্তর চররাঘবরায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত একজন শিক্ষক। সে ওই বিদ্যালয় থেকে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে সাড়ে ৮ বছরে ৫ম শ্রেণি পাস সনদ এনে জমা দিয়ে গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
মোহাম্মদ মাসুদ বর্তমানে গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য। মোঃ ইরফান শারাফ খান বর্তমানে পুরান রামপুর আঃ রব আলিম মাদ্রাসায় ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক পুনরায় পুরাতন সকল সদস্যদের কে নির্বাচিত করবে এবং কমিটি গঠন করবে ঘোষনা দেওয়ায় ইলিয়াস রাড়ী ও মাসুদ খান
আবারও অবৈধ ভাবে নির্বাচন করার জন্য প্রধান শিক্ষকের সহযোগীতায় ভোটার তালিকায় সংযুক্ত হন। অভিযোগে অভিভাবক সদস্য প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন দুলাল দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নিকট তদন্তপূর্বক ওই সদস্যদের ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন করে গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য বিনিত আবেদনও জানান।
এদিকে বিদ্যালয়ের আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে অভিভাবকদের সাথে কথা হলে সকলেই প্যানেল নির্বাচন বর্জন ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেনকে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি হুমায়ুন পাটওয়ারীর কাছে মুঠোফোনে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকর্মীকে মানহানী মামলার হুমকি প্রদান করেন। এছাড়াও নির্বাচন কেন্দ্রিক এসকল অভিযোগের কোন তথ্যই নাই বলে মন্তব্য তার।
নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন অফিসার লোকমান হেকিমের সাথে কথা হলে জানান, একটি নির্বাচন করতে ৩৮ দিনের মতো সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাত্র ১০/১৫ দিন পূর্বে নির্বাচনের জন্য আবেদন করেছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা একেবারেই অসম্ভব। এর প্রেক্ষিতে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তিনি আরও জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রধান শিক্ষককে শোকজ করবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক কবির হোসেনকে আমি ডেকে পাঠিয়েছি। এবং জানিয়েছি নির্বাচনকে ঘিরে আপত্তিকর পরিস্থিতি তৈরী না করতে বারণ করেছি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌলী মণ্ডলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, অনিয়ম করে নির্বাচন করার কোন সুযোগ নেই। এবং নির্বাচন ভোটারদের প্রত্যক্ষ্য ভোটের মাধ্যমেই হবে। যে বা যাহারা কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরী করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।