ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে।
এছাড়াও গত রবিবার থেকে এ রবিবার পর্যন্ত একসপ্তাহের দিনরাত টানা বর্ষণে মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে রামগঞ্জ উপজেলায়। যার ফলে বন্যায় কবলিত হয়ে দূর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে দিনাতিপাত করছে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ।
প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে অবিরাম ছুটে চলছেন রামগঞ্জ উপজেলার শায়েখ মুসলিম ছাত্র সংসদ এর নেতৃবৃন্দ। প্রাকৃতিক গোলযোগে অবরুদ্ধদের দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছেন ত্রাণ-সাহায্য। নৌকাযোগে বিভিন্ন এলাকা থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে লোকদেরকে করছেন সহায়তা, অসুস্থদের চিকিৎসা সেবায় রাখছেন অভূতপূর্ব ভূমিকা, এবং বন্যায় খাবার প্রস্তুতে অনুপযোগীদের জন্য প্রাথমিক খাবারের আয়োজনও করতে দেখা গিয়েছে তাদেরকে।
সংগঠনের সমন্বয়ক, মুফতী ইমরান হোসাইন এর সাথে কথা বলে জানা যায়, শুরুর দিন থেকেই তারা বানভাসিদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে সাধ্যের মধ্যে সহায়তা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবং শেষ দিন পর্যন্ত চালিয়েও যাবেন এই কর্মযজ্ঞ।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সারাদিন সংগঠনের পক্ষ থেকে উপজেলার মাছিমপুর, চন্ডিপুর ও নারায়নণপুর গ্রামে পানিতে পরিবেষ্টিত মানুষের ঘরে ত্রাণ বিতরণ করে তারা।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন, মুফতী ইমরান হোসাইন, মাওলানা মোঃ রাশেদুল ইসলাম, হাফেজ তারেক আজীজ, হাফেজ মহিউদ্দিন (জাহাঙ্গীর),হাফেজ ইমরান হোসাইন, হাফেজ শফিকুল ইসলাম,হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, হাফেজ আশরাফ আলী,হাফেজ মাহাদি হাসান,হাফেজ জাবের হোসাইন,হাফেজ জুবায়ের আহমদ,মোঃ আকরাম হোসাইন প্রমুখ।
এছাড়াও কাছ থেকে মানুষের দূর্বিষহ পরিস্থিতি অবলোকন করেছেন, তাই অবিলম্বে বন্যা কবলিতদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে উপজেলার সামর্থ্যবানদের আহ্বান জানিয়েছেন মুফতী ইমরান হোসাইন।
তার সাথে আরো কথা বলে জানা যায়, শায়েখ মুসলিম ছাত্র সংসদ নামক সংগঠনটি মূলত রামগঞ্জ এর সর্বজনীন শ্রদ্ধেয় মাওলানা মুসলিম (রহঃ) নামে নামকরণ হয়েছে। তার শুভাকাঙ্ক্ষী যেসকল ছাত্র রয়েছে, এদের মধ্য হতে একদল ছাত্র সুপরিকল্পিত ও সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আশেপাশে থাকা সকল সঙ্গীদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটি প্রস্তুত করেছেন। তারা মনে করেন, এই সংগঠনের গুন্ডীতে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক থাকবে অটুট, একই সাথে সমাজ সেবার মাধ্যমে পূণ্য কামানো যাবে খুব সহজে, এবং প্রতিটি ভালোকাজের সাওয়াবের অংশ তাদের পথনির্দেশক মাওলানা মুসলিম (রহঃ) কবরে পেতে থাকবে অবিরত। এছাড়াও তারা মনে করেন, এ সংগঠনে যুক্ত হওয়ার সুবাদে মাওলানা মুসলিম (রহঃ) নিরবিচ্ছিন্ন অমর হয়ে থাকবে তাদের মাঝে।
সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু করেছে ২০২২/২৩ অর্থবছরে। মাওলানা মুসলিম (রহঃ) এর যত ছাত্র ও শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে, সকলেরই সংগঠনে সম্পৃক্ততার সুযোগ রয়েছে বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন সংগঠনের মুখপাত্রগন।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাওলানা মুসলিম (রহঃ) একজন সাধু-সন্ন্যাসী বা ধর্মগুরু প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। জীবদ্দশায় তিনি রামগঞ্জ আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেছেন, এবং নিজ প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার গ্রাম উপজেলার দক্ষিণ নারায়ণপুরে নূরিয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসা নামে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও তিনি অত্রাঞ্চলের সকলের শ্রদ্ধাভাজন হওয়ার সুবাধে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
প্রসঙ্গত, দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙনের ফলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এতে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সড়কে বন্ধ আছে যান চলাচল। লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগও।