ফরিদগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসের ভেতরে মারধরের শিকার হয়েছেন এ.আর.হাই পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল।
ওই সময় শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দের আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছিল। তদন্তে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) ও ফরিদগঞ্জের ইউএনও।
৫ আগস্টের পর প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে টানা অনুপস্থিত, সরকার দলের প্রভাব খাটিয়ে প্রধান শিক্ষকের অবৈধ নিয়োগসহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। মারধরের পর প্রধান শিক্ষক ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে ওই মারধরের শিকার হয়েছেন। নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া বলেছেন, মারধরের ঘটনা তিনি আমাকে ফোনে জানিয়েছেন, কোন অভিযোগ দেননি।
সূত্র জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. এরশাদ উদ্দিন ফরিদগঞ্জের ইউএনও-কে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ে তদন্তে যান। তদন্ত চলাকালীন প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল ইউএনও’র অফিস কক্ষে অবস্থান নেন।
এক পর্যায়ে, প্রধান শিক্ষক বেলা আনুমানিক সাড়ে ১২ ঘটিকায় ইউএনও’র অফিস থেকে বাইরে যান। ঠিক ওই সময় একদল যুবক ইউএনও অফিস কক্ষের সামনে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে।
আশেপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
সূত্র জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ৫ই আগস্টের পর হতে তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত, সরকারি স্কুলের শিক্ষক হয়েও আওয়ামী লীগ ফরিদগঞ্জ উপজেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ বহন করেছেন, সরকার দলের প্রভাব খাটিয়ে তিনি অবৈধভাবে নিয়োগ নিয়েছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ (প্রমাণপত্র সংযুক্ত), শিক্ষা সনদ জালিয়াতি, মুক্তযোদ্ধার পোষ্য ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে বিশেষ সুবিধা গ্রহণ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কয়েকটি বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ দখল ইত্যাদি। অভিযোগে বলা হয় নিয়ম বহির্ভুত অনুপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষকের অবৈধ নিয়ো বাতিলসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের অভিভাবক মোশাররফ হোসেন নান্নু পাটওয়ারি শিক্ষা সচিব, দুদক, শিক্ষা বোর্ড, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়-সহ বিভিন্ন দপ্তরে ২০১৯ সালে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
মোশররফ হোসেন নান্নু বলেন, কয়েকটি তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ মেলার পরও তৎকালীন সরকার দলের প্রভাব খাটিয়ে প্রধান শিক্ষক তদন্ত রিপোর্ট ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাধার সৃষ্টি করনে। এক প্রশ্নের উত্তরে আরও বলেন, ওই অভিযোগ আমি এখনও প্রত্যাহার করিনি।
এদিকে, প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন কাজল নিজেকে অসুস্থ দাবী করে উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (শিক্ষা), কুমিল্লা বরাবর ৩রা আগস্ট হতে ১৪ই আগস্ট পর্যন্ত ছুটির আবেদন করেছেন। ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক তাকে বেড রেস্টে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে মুঠোফোনে কল দিলে প্রধান শিক্ষক মারধরের তথ্য স্বীকার করেন। বেড রেস্টে থাকার আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে কলেন, ইউএনও অফিসে উপস্থিত থাকতে এডিসি আমাকে বলেছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে- “আমি প্রাইভেট চিকিৎসকের চেম্বারে আছি” বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
তদন্তে কি হয়েছে- এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা কোন মন্তব্য করেননি। এক প্রশ্নের উত্তরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক কখন, কেন আমার অফিসে প্রবেশ করেছেন আমার জানা নেই। তবে, প্রধান শিক্ষক আমাকে ফোনে বলেছেন, তিনি মারধরের শিকার হয়েছেন, হামলা কারীদের চেনেন না। তবে, তিনি লিখিত কোন অভিযোগ করেননি।
এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হানিফ সরকার বলেছেন, প্রধান শিক্ষকের কোন অভিযোগ আমি পাইনি এবং আমি এ বিষয়ে জানি না।